ফেসবুক লাইভ

ফেসবুক লাইভ 

     — রচনা   ইভান গুপ্ত

ফোনটা যখন বেজে উঠলো, সুচিত্রা দেবী তখন চা এ চিনি মিশিয়ে, চামচটা ধুয়ে রাখছেন ।  রিংটোন ‘প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে’ শুনতে ভালোই লাগে । সুচিত্রা দেবী তাড়াহুড়ো করলেন না । ছোট ট্রেতে, নিজের জন্মরাশির নাম ও চিন্হ আঁকা কাপটা বসিয়ে উনি ধীর পায়ে কিচেন থেকে বসবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন । বারোটা জন্ম রাশির একটা সেট দুই বছর আগের বিবাহবার্ষিকীতে ওনার স্বামী উপহার দিয়েছিল ।  বাষট্টি বছরের হাঁটু , বয়েসের জানান দেয় একটু তাড়াতাড়ি হাঁটলেই । ওনার ছেলে কৌস্তভ ফোন করেছে নার্সিংহোম থেকে । এই সময়েই করার কথা । 

সুচিত্রা দেবীর স্বামী  উনসত্তর বছর বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত চার্টার্ড অ্যাকাউনন্টেট দিলীপ অধিকারী বাবু আজ পাঁচদিন হলো আই সি ইউ তে ভর্তি আছেন । ম্যাসিভ হার্ট  টাক । দ্বিতীয় দিন সুচিত্রা দেবী দেখতে গিয়ে ছিলেন । কৌস্তভ রোজই যাচ্ছে । নার্সিং হোম থেকেই ফোন করবে কথা ছিল । 

সুচিত্রাদেবী : বল , কেমন দেখলি ? 

কৌস্তভ : ভালো নয় মা । ভেন্টিলেশনেই রয়েছে । ডাক্তারবাবু বলছেন আর বড় জোর দুই থেকে তিন ঘণ্টা । 

সুচিত্রাদেবী : তোর বড় ফোনটা নিয়েছিস ? শেষ মুহূর্তের ভিডিও দিবি তো ফেসবুকে ?

কৌস্তভ : সে তো দিতেই হবে । ভাবছিলাম লাইভ ভিডিও দেবো । মারা যাবার মুহূর্তে মুখের ভাবটাব সব লাইভ দেখাতে পারলে ভিউ অনেক বেড়ে যাবে । 

সুচিত্রাদেবী চাএ চুমুক দিয়ে বললেন : কাল মিতুন ফোন করেছিল । ও – ও তাই বলছিলো । বলছিলো ‘ সোনাই কে বোলো, এমনি ভিডিও নয়, লাইভ দিতে আর জামাইবাবুর মুখটা আরো কাছ থেকে দেখাতে । নিঃশ্বাস না নিতে পারার যন্ত্রণাটা ঠিক ফুটছে না ।’ 

 কৌস্তভ : মাসি তো বলেই খালাস । এদিকে ওই নতুন ডাক্তারটা আই সি ইউ তে ঢুকে ভিডিও করা নিয়ে খুব রাগারাগি করছিলো কাল । ফেসবুকে ভিডিও দিতে দেবে না , ভাবা যায় বলো ?! পাগল না কি !

সুচিত্রাদেবীর ভুরু কুঁচকে গেছে : আজকেও ঝামেলা করছে নাকি ?

কৌস্তভ শুকনো হাসলো : না , না । কাল কমপ্লেন করলাম না ? ডক্টর সেনগুপ্ত কে অন্য কোন ফ্লোরে সরিয়ে দিয়েছে । আমাদের ডক্টর দত্ত খুব কোঅপারেট করছেন । আমায় তো নিজে থেকেই বললেন  ‘আপনার বাবার কন্ডিশন আর একটু খারাপ হলেই আপনাকে খবর দেব । আপনি বেডের কাছে লাইট,  মাইক  বসানোর সময় পাবেন’ । 

সুচিত্রাদেবী একটা শ্বাস ছাড়লেন : তবু ভালো । শোন, সময় হলে আমায় জানাস । আমি আত্মীয় বন্ধুদের মেসেজ করে দেবো  ‘লাইভ’ দেখার জন্য । 

কৌস্তভ : হু । আমি এখন রাখছি মা । নার্সিং হোমের সোশাল মিডিয়া কাউন্টার থেকে একটা পাওয়ার ব্যাংক কিনতে হবে । 

সুচিত্রাদেবী : কিছু খেয়ে নিস । আমিও হাতের কাজ সেরে ফেলি । আমার এতদিনের সাথি চলে যাবে , আমাকেও তো দেখতে বসতে হবে । 

মোবাইল ফোন কাঁচের সেন্টার টেবিলে নামিয়ে রেখে, সুচিত্রাদেবী সোফায় হেলান দিলেন । চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পাশের ব্যালকনির দরজা দিয়ে বাইরের আকাশটা দেখছিলেন । একটা চিল কে তিনটে কাক মিলে তাড়ানোর চেষ্টা করছে । আর চিল টা চেষ্টা করছে তার বড় ডানার ঝাপটায় কাকগুলো কে বেসামাল করে দিতে । 

( হ্যা কাল্পনিক কিন্তু পুরোটা নয় । পুরনো দিনের অনেক লেখক, চলচিত্র নির্মাতার ভবিষ্যৎবানী আংশিক সত্যে পরিনত হতে চলেছে । খবরের চ্যানেল তো বটেই, সোশ্যাল মিডিয়াতেও শুরু হয়ে গেছে বর্তমানের মহামারি, যার নাম  SHARE । এর শেষ কোথায় ? )

— সমাপ্ত

© Content copyright reserved. Author email swamiguptagyan@gmail.com

অপ্রেম ডায়রি

অপ্রেম ডায়েরি

 —— ইভান গুপ্ত

অল ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার  ?

কিন্তু  ……….,

ভালোবাসা ও যুদ্ধে পাওয়া ক্ষত, কোনদিনই পুরোপুরি শুকোয় না । 

রাজি ?

___________

© Copyright reserved. 

Author email swamiguptagyan@gmail.com

আজ কাল

আজ কাল

—– ইভান গুপ্ত

প্রতিটা প্রজন্ম তার আগের প্রজন্মের চেয়ে : 

একটু  বেশী চালাক, 

একটু বেশী অস্থির, 

একটু বেশী দুঃক্ষি, 

একটু বেশী বাস্তববাদী, 

একটু কম স্বাস্থবান, 

একটু বেশী প্রযুক্তি বোঝে আর একটু কম সাহিত্য , 

একটু কম আবেগপ্রবন

একটু কম জীবনবোধ

একটু বেশী আত্মকেন্দ্রিক

একটু বেশী দুশ্চিন্তাগ্রস্থ

একটু কম আদর্শবান

একটু কম অক্সিজেন, একটু কম গাছপালা, একটু কম শান্তি, একটু কম জায়গায় ……

একটু কম ‘মানুষ’ ।

______________

© All Rights Reserved. Author’s mail : swamiguptagyan@gmail.com

পাহাড়ের পথে

পাহাড় পথে

—- ইভান গুপ্ত

অফিস যাই , স্কুল যাই,

যাই দোকান বাজার 

মন গেছে আজ পাহাড় পথে

যেখানে ফুলের বাহার ।

রোদ সোনালি , বোতাম ফুল

ঠান্ডা বাতাস, নরম উল

সেখানে শুধুই মিছিল মেঘের,

ভাষন কুয়াশার ।

মন গেছে আজ পাহাড় পথে

যেখানে ফুলের বাহার ।

পাইন বনে ঝিঁঝির ডাক

কিছু কথা না বলাই থাক,

জানলা সকাল দেয় উপহার

কাঞ্চন চূড়ার ।

মন গেছে আজ পাহাড় পথে

যেখানে ফুলের বাহার ।

সেখানে পথের চাপান উতোর

পাখীর ডানায় নরম ভোর –

রডোডেনড্রন আগুন জ্বালায় 

বিপ্লবী পতাকার !

মন গেছে আজ পাহাড় পথে

যেখানে ফুলের বাহার ।

____________

© All Rights Reserved

Author mail : swamiguptagyan@gmail.com

নাম নেই

নাম নেই

— ইভান গুপ্ত 

সেই জায়গাটার কোনো নাম নেই । পাহাড় আছে , বরফে ঢাকা, অনেক দূরে, কুয়াশা ঢাকা রাস্তা আছে বনের মধ্যে দিয়ে, সব প্রাচীন গাছে ভরা বন । জায়গাটা খুব সুন্দর কিন্তু কোনো নাম নেই । যারা সেই জায়গাটা ঘুরে আসে, তারা নিজেদের পছন্দ মতো একটা নাম দেয় মনে মনে । ওই নামেই মনে রাখে জায়গাটা সারাজীবন । এই ভাবে জায়গাটার অনেক নাম হয়ে গেছে – এক এক জনের দেওয়া এক এক নাম । কিন্তু জায়গাটার কোনো নাম নেই । 

© Copyright reserved. 

email : swamiguptagyan@gmail.com